শীতকাল মানেই হরেক মজা। দলবেঁধে পিকনিক, এদিক ওদিক ঘুরতে যাওয়া। চিড়িয়াখানা, ইকো পার্ক, সার্কাস, ম্যাজিক শো, মেলা— হাজারও হাতছানি। কিন্তু জ্বর, সর্দি কাশির জন্য অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও বেরনো যায় না। ধুলো, ধোঁয়ায় বাড়ে শ্বাসকষ্ট। গলা ব্যথায় ভোগেন অনেকেই। বাড়ে ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ। হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস থাকলে মারাত্মক কষ্ট হয়। ত্বকের সমস্যা তো থাকেই। বাতাসে আদ্রতা কমে যাওয়ায় রুক্ষ হয়ে ওঠে ত্বক। বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও। হাঁপানি থাকলে রাতভর হয় খুকখুকে কাশি। ফলে শীতকালকে মনে হয় বিভীষিকা। কীভাবে এই সমস্যাগুলোকে এড়ানো সম্ভব, সেই সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশে ১২ ডিসেম্বর নিউ আলিপুরের বি.পি. পোদ্দার হসপিটালে হয়ে গেল আলোচনায সভা। সেখানে জ্বর, সর্দি-কাশি থেকে দূরে থাকার টিপস দিলেন পালমোনোলজিস্ট ডা. রিক ব্যানার্জি। তিনি বলেন, ‘শীতকালে ভাইরাস বৃদ্ধি পায়। সংক্রমণের ফলে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা বাড়ে। কাশি, গলা ব্যথা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে জল পড়া তাই দেখা যায় ঘরে ঘরে। রাতে বা ভোরের দিকে অ্যাস্থমার প্রকোপ বাড়ে। খুব ঠান্ডায় বেশি সময় থাকলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। তখন কাঁপুনি হয়। ঠান্ডায় শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই যথাযথ গরম পোশাক পরা আবশ্যক। ঠান্ডা লাগতে দেবেন না। ধুলো, ধোঁয়াকেও এড়িয়ে চলুন। এগুলো থেকেও অ্যাস্থমা হতে পারে।’ একজন জানতে চাইলেন শীতে হৃদরোগের আশঙ্কা নিয়ে। সেই সম্পর্কে কার্ডিওলজিস্ট ডা. অভিজিৎ আইচ ভৌমিক বলেন, ‘শীতকালে ঠান্ডার কারণে রক্তনালী সঙ্কুচিত হয়। ফলে চাপ বাড়ে হৃদপিণ্ডের উপরে। অক্সিজেনের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। আবার ঠান্ডায় রক্ত ঘন ও আঠালো হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। এতে রক্ত জমাট বাঁধে। তাই স্ট্রোক হতেই পারে। যাঁদের আগে থেকেই হৃদরোগ রয়েছে, তাঁদের সাবধানতা জরুরি। তাই উষ্ণ পানীয় পান করা দরকার। নিয়মিত ব্যায়ামও অত্যাবশ্যক। ফাস্ট ফুড থেকে দূরে থাকুন। কোলেস্টেরল যাতে না বাড়ে, লক্ষ্য রাখুন। ধূমপান, মদ্যপান অবশ্যই ছেঁটে ফেলুন জীবন থেকে। আর বুকে ব্যথা টের পেলে অবিলম্বে ডাক্তার দেখান।’ শীতে বারবার যেতে হয় ওয়াশরুমে—এই বিষয়ে ইউরোলজিস্ট ডা. দেবায়ন ব্যানার্জি বলেন, ‘ঠান্ডাতে ইউরোলজির সমস্যাও বাড়ে। শরীর থেকে ঘাম কম বের হয়। তাই মূত্রথলিতে বেশি প্রস্রাব জমা হয়। বারবার প্রস্রাব পাওয়ার সেটাই কারণ। এই সময়ে পর্যাপ্ত জল পান করা আবশ্যক। শরীর সোয়েটার, টুপি, মোজা পরবেন। শরীর যেন গরম থাকে।’ বি.পি. পোদ্দার হসপিটালের এই উদ্যোগ সম্পর্কে গ্রুপ অ্যাডভাইজার সুপ্রিয় চক্রবর্তী জানান, ‘শীতকালে জ্বর-সর্দিতে ছোট থেকে বড়, সকলেই ভোগেন। পাশাপাশি, হার্ট, ইউরোলজির সমস্যাও থাকে। আমরা সারা বছর অপেক্ষা করি কখন শীতকাল আসবে। কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়লে শীতের মজা নেওয়া সম্ভব নয়। সেজন্যই ঠান্ডার মধ্যে সুস্থ থাকার মন্ত্র জানা দরকার। তাই যতই আনন্দে মাতুন, শরীরকে অবহেলা করবেন না।’